A Reply to Christian Missionary (প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – ২)
A Reply to Christian Missionary
ভদ্রলোকের তারুণ্যদীপ্ত চেহারা। চুল আর দাড়িতে পাক ধরায় মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই যেন বয়স বেড়ে গেছে; কিন্তু চেহারার মধ্যে তারুণ্যের ছাপ স্পষ্ট। এই মুহূর্তে তিনি খুব মন খারাপ করে আমার সামনে বসে আছেন। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের মুখ ভারী হলে আশপাশের পরিবেশ গুমোট আকার ধারণ করে। ভদ্রলোকও সেরকম একজন মানুষ। মনখারাপ অবস্থাটা ওনার সাথে একদমই যাচ্ছে না।
তার ফোন বেজে উঠল। কপাল কুঁচকে তিনি ফোনের দিকে তাকালেন। দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তিনি খুবই বিরক্তি বোধ করছেন। ফোনটি বাজতে বাজতেই বন্ধ হয়ে গেল। ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলেন; কিন্তু কৃত্রিম হাসিতে তাকে একদম মানায়নি।
তাকে প্রশ্ন করলাম, তো, আপনি খ্রিষ্টান মিশনারিদের কোথায় পেলেন?
প্রশ্ন শুনে তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলেন। বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি পান করলেন। একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, আমার এক বৃটিশ বন্ধু লন্ডনে মিশনারিদের একটি দাওয়া-প্রোগ্রামে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল; সেখানেই।
আপনার বন্ধু কি মুসলিম?
না। খ্রিষ্টান।
ও আচ্ছা।
ভদ্রলোকের সমস্যা সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া দরকার। তিনি সম্প্রতি খ্রিষ্টান মিশনারিদের কাছ থেকে একটি তথ্য পেয়েছেন। এই তথ্যটি এতটাই বিদঘুটে যে, এর সত্যাসত্য না জানা অবধি ভদ্রলোক কোনো শাস্তি পাচ্ছেন না। তথ্যটি হলো—কুরআনে নির্দিষ্ট করে বলা নেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সেদিন ঠিক কাকে কুরবানী করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নাকি ইসহাক আলাইহিস সালামকে? হাদীসেও এটির তেমন কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না; কিন্তু মুসলিমরা নাকি অন্ধভাবেই বিশ্বাস করে যে—ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সেদিন ইসমাঈল আলাইহিস সালামকেই কুরবানী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কুরআন এই ইস্যুতে কোনো নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার না করলেও বাইবেলে উল্লেখ পাওয়া যায়, সেদিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নয়, ইসহাক আলাইহিস সালামকে কুরবানী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
আমাদের আলাপ আরও কিছুদূর গড়াল। বললাম, তো, এখন আপনি কী বিশ্বাস করছেন?
ভদ্রলোক আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না। সম্ভবত তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এরই মধ্যে আমাদের মাঝে সাজিদ এসে উপস্থিত। হাতে একগাদা বই। লাইব্রেরি থেকে ফিরেছে। এসেই সে আমার পাশে ধপাস করে বসল। কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। কাঁধ থেকে ব্যাগটি টেবিলে রাখতে রাখতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল—আচ্ছা, তোকে যদি বলি ক্লাসিক্যাল একটি সীরাতগ্রন্থের নাম বলতে, তুই কোন সীরাতটির কথা বলবি?
তার চুল উসকোখুসকো। চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে উত্তর পাবার আশায় সে আমার দিকে তাকাল।
আমি বললাম—ইবনু ইসহাক অথবা ইবনু হিশামের সীরাতগ্রন্থ। যদি আরও আপডেটেড সীরাতের কথা জানতে চাস তাহলে হাল আমলের আর রাহীকুল মাখতুমের কথা বলতে পারি।
সাজিদ জোরে একটি নিঃশ্বাস ফেলে বলল, হুম। আমি জানতাম তুই এই উত্তরটাই দিবি। ৯৫ ভাগ শিক্ষিত বাঙালী মুসলিম এই উত্তরই দেবে।
তুই কী বলতে চাচ্ছিস, ঠিক বুঝতে পারছি না।
সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সীরাতের নাম উঠলেই লাফ দিয়ে ইবনু ইসহাক অথবা ইবনু হিশামে চলে যাস; কিন্তু বাংলা ভাষায় যে অত্যন্ত ক্লাসিক্যাল সীরাত মজুদ আছে, সেটা কি জানিস?
কয়েক মুহূর্ত ভাবলাম। বাংলা ভাষায় সীরাত! তাও আবার ক্লাসিক্যাল পর্যায়ের! ঠিক মনে করতে পারছি না। হয়তো বা আমার জানা নেই। বললাম-না তো। কোনটার কথা বলছিস?
সাজিদ বলল, মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ এর মোস্তফা চরিত।
বইটির কথা আমি অনেক শুনেছি। কখনো পড়া হয়নি অবশ্য। এটি যে এত উঁচু এবং ক্ল্যাসিক্যাল পর্যায়ের সীরাত সেটাই আমি জানতাম না। বললাম—বলিস কী? এত বিখ্যাত সীরাত অথচ আমিই জানি না? বাই দ্য ওয়ে, তুই কি পড়েছিস সেটি?
সাজিদ কোনো উত্তর দেয়নি। আমি জানতাম সে উত্তর দেবে না। পড়েছে তো
অবশ্যই, নয়তো এখানে এসে এটা নিয়ে লেকচার ঝারত না। পাশে বোমা ফাটলেও যার মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না, সে এসেই যখন এত্তবড় লেকচার দিয়ে দিল, তাহলে নিশ্চিত সামথিং ইজ দেয়ার।
আমাদের আলাপের মাঝখানে ভদ্রলোক কথা বলে উঠলেন। ও হ্যাঁ, ভদ্রলোকের নাম বলা হয়নি। তার নাম আহসান ইমতিয়াজ। আহসান সাহেব সাজিদের দিকে তাকিয়ে বললেন—তুমিই কি সাজিদ?
সাজিদ তার দিকে তাকাল। সে মনে হয় এতক্ষণ খেয়াল করেনি। সালাম দিয়ে বলল, জি, আমিই সাজিদ।
ভদ্রলোক ওয়া আলাইকুম আসসালাম বলে সাজিদের দিকে হাত বাড়াল। আমি বললাম সাজিদ, আহসান আঙ্কেল সেই সকাল দশটা থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছেন।
সাজিদের প্রশ্ন, তুই কি গতকাল তার কথাই বলছিলি?
হ্যাঁ।
সাজিদ আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বলল—সরি আঙ্কেল! আসলে আজ আমার এক্সট্রা ক্লাস ছিল বলে লেইট হয়ে গেল।
না না! ইটস ওকে আহসান আঙ্কেল বললেন। এরপর নানা রকম আলাপের মাধ্যমে আহসান আঙ্কেল তার মনের খচখচানির ব্যাপারটি সাজিদকে খুলে বলতে লাগলেন—আসলে হয়েছে কি জানো, খ্রিষ্টান মিশনারিদের পাল্লায় পড়ে খুব শঙ্কার মধ্যে আছি। তারা বলতে চায় যে—ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নয়, ইসহাক আলাইহিস সালামকেই সেদিন কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাইবেলে নাকি এমনটাই বলা আছে।
সাজিদ চুপচাপ, ঠান্ডা মাথায় সবকিছু শুনে বলল—বাইবেলের যে জায়গায় ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বদলে ইসহাক আলাইহিস সালামের কথা আছে তা কি আপনি পড়েছেন?
হ্যাঁ বললেন আহসান আঙ্কেল।
মনে আছে সেই অংশটুকু?
হ্যাঁ
বলুন তো।
আহসান আঙ্কেল এবার বাইবেলের সেই অংশটুকু উদ্ধৃত করে বললেন বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের জেনেসিস অধ্যায়ে বলা আছে—And He (God) said, Take now thy son, thine only (son) whom thou lovest, and get thee into the land of Moriah; and offer him there for a burnt offering upon one of the mountains which I will tell thee of. [১]
এই রেফারেন্স টেনে মিশনারিরা প্রমাণ করতে চায় যে সেদিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাইলকে নয়; বরং ইসহাককে কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সাজিদ বলল, আঙ্কেল, আপনি এইমাত্র বাইবেলের যে অংশ উদ্ধৃত করেছেন তাতে বলা আছে-ঈশ্বর ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তার একমাত্র সন্তান, যাকে তিনি নিজপ্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন, তাকে নিয়ে ঈশ্বরের দেখানো পর্বতে গিয়ে কুরবানী দিতে।
আহসান আঙ্কেল বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু বাইবেল এও বলছে যে সেই পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নয়, ইসহাক আলাইহিস সালাম।
সাজিদ বলল সেই আলোচনায় আমরা একটু পরে আসছি। আগে আপনি এই অংশটুকু খেয়াল করুন। এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আদেশ করে বলা হচ্ছে—Take your only son. বিষয়টি গভীরভাবে বোঝার জন্য বাইবেলের এই শব্দচয়ন কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। মূল হিব্রু ভাষায় Only শব্দের জন্য যে হিব্রু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো—Yachiyd. হিব্রুতে Yachiyd শব্দ দিয়ে এবসলিউট সিঙ্গুলারিটি বোঝায়। মানে—কেবল একজনই—Just One.
আমি আর আহসান আঙ্কেল মনোযোগ দিয়ে সাজিদের কথা শুনছি—তাহলে, ঈশ্বর যখন মালাইহিস সালামকে তোমার একমাত্র পুত্রকে নিয়ে যাও বলে আদেশ দিচ্ছেন, তখন সেই আদেশে আসলে কাকে বুঝানো হচ্ছে? ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে? না ইসহাক আলাইহিস সালামকে?
আমরা দুজনই চুপ করে আছি। সাজিদ বলে চলল—এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের এই ঘটনার পেছনের ইতিহাস খতিয়ে দেখতে হবে। ইহুদী, খ্রিষ্টান, মুসলিম অর্থাৎ আব্রাহামিক ধর্মের সকল স্কলারগণ এই ব্যাপারে একমত যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জীবনের অধিকাংশ সময় সন্তানহীন ছিলেন। তখন তার স্ত্রী ছিলেন সারা আলাইহাস সালাম। যখন সারা আলাইহাস সালামের গর্ভে কোনো সন্তানের জন্ম হচ্ছিল না, তখন তিনি তার একজন দাসীর সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। সেই দাসীর নাম ছিল হাজেরা আলাইহাস সালাম। রাইট?
হুম আমি বললাম।
তাদের বিয়ের পরে হজেরা আলাইহাস সালামের গর্ভ থেকে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ভূমিষ্ট হন যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বয়স ছিল চুরাশি বছর, তাই না?
আহসান আঙ্কেল মাথা নেড়ে সায় দিলেন। সাজিদ বলতে লাগল—অর্থাৎ ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের স্কলারগণ এই ব্যাপারে একমত যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রথম পুত্র। ইসমাঈলের বয়স যখন ১৪ বছর, তখন সারা আলাইহাস সালাম, অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রথম স্ত্রী, গর্ভবতী হন এবং পরে ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্ম হয়। মোদ্দাকথা, ইসহাক আলাইহিস সালাম, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। আরও পরিষ্কারভাবে বললে—ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং ইসহাক আলাইহিস সালামের মধ্যে ১৪ বছরের একটা টাইম-গ্যাপ থেকে যায়। এতটুকু কি ক্লিয়ার?
আহসান আঙ্কেল আবার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।
তাহলে, এখান থেকে, অর্থাৎ বাইবেল থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্মের পরে আরও ১৪ বছর পর্যন্ত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কেবল একজন সন্তানেরই পিতা ছিলেন। মানে তখন শুধু তার সন্তান ছিলেন—ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। রাইট?
হুম।
এখন, আমরা আবার বাইবেলের সেই অংশে ফিরে যাই, যে অংশে বলা হচ্ছে—তোমার পুত্রকে, তোমার একমাত্র পুত্রকে নিয়ে যাও আমার দেখানো পর্বতে। দেখুন আঙ্কেল, বাইবেল কিন্তু খুব স্পষ্ট করেই বলছে—তোমার একমাত্র পুত্রকে। এখন আমরা যদি খ্রিষ্টান মিশনারিদের কথামতো ধরেও নিই যে, এখানে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নয়, ইসহাক আলাইহিস সালামকে বুঝানো হচ্ছে, তাহলে তোমার একমাত্র পুত্রকে বলার কারণ কী? ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের পর তো ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মোট দুটো সন্তান হয়ে গেল। এখানে তো বলা উচিত তোমার পুত্রদের মধ্য থেকে অথবা তোমার দুই পুত্রের মধ্য থেকে ইত্যাদি। কারণ, এই ঘটনায় যদি ইসহাক আলাইহিস সালামকে টানি, তাহলে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় দুজন। তাহলে দুজন সন্তান থাকা সত্ত্বেও এখানে বাইবেল কেন তোমার একমাত্র পুত্রকে বলল? এটি এজন্যেই যে, এই একমাত্র পুত্র ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। এই ঘটনা অর্থাৎ সন্তান কুরবানীর ঘটনা যখন ঘটছে, তখন ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মও হয়নি। তখন কেবল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের একজনই সন্তান ছিল— ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। তাহলে বাইবেল এবং বাইবেলীয় ইতিহাস মতে— ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সেদিন ইসহাক আলাইহিস সালামকে নয়, ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এতটুকু বলে সাজিদ একটু থামল। আহসান আঙ্কেল বললেন—কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে, সাজিদ। খ্রিষ্টানরা ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নবী হিশেবে এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বৈধ পুত্র হিশেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। কেন দিতে চায় না, জানো? কারণ, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল একজন দাসীর গর্ভে, তাই।
আহসান আঙ্কেলের এই কথা শুনে সাজিদ হাসল। এরকম সিরিয়াস ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে সে কখনো হাসে না। আজ ব্যতিক্রম হলো। হাসি থামিয়ে বলল—কিন্তু আঙ্কেল, বাইবেল যে এ ব্যাপারে একদম ভিন্ন কথা বলে।
যেমন? আহসান আঙ্কেলের উৎসুক প্রশ্ন।
বাইবেলই বলছে, হাজেরা আলাইহাস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বৈধ স্ত্রী ছিলেন। বাইবেলের জেনেসিসে বলা হয়েছে—Sara, Abrams wife, took Hagar the Egyptian, her slave-girl, and gave her to her husband Abram as his wife.[২]
অর্থাৎ সারা, যিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী ছিলেন, তার দাসী হাজেরা আলাইহাস সালামকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে দিলেন স্ত্রী হিশেবে। এখান থেকে একেবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে হাজেরা আলাইহাস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বৈধ স্ত্রী ছিলেন।
আহসান আঙ্কেল বললেন, আই সী।
তাছাড়া, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম শুধু মুসলিম নয়, খ্রিষ্টান এবং ইহুদীদের কাছেও একজন সম্মানিত প্রফেট। তাহলে তারা কীভাবে এটা ভেবে নিতে পারে যে এরকম সম্মানিত একজন প্রফেটের কারও সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারে এবং অবৈধ সন্তানও আসতে পারে?
সাজিদের কথায় ভীষণ যুক্তি আছে। আসলেই তো। যাকে নবী হিশেবে মানে, তার বিরুদ্ধে এরা কীভাবে এরকম ধারণা পোষণ করে?
আহসান আঙ্কেল বললেন—তোমার কথা বুঝতে পেরেছি আমি। তবে এ ব্যাপারে তাদের কাছে একটি যুক্তি আছে। তারা বলে—শিশু ইসমাঈল নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান হিশেবে ততদিন পর্যন্ত স্বীকৃত ছিলেন যতদিন ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্ম হয়নি। ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সাথে সাথে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান হবার মর্যাদা। হারিয়ে ফেলেন।
গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি পান করল সাজিদ। এরপর গ্লাসটি টেবিলের ওপরে রাখতে গিয়ে বলল, এটাও কিন্তু একটা বাইবেল বিরোধী ঈমান, আঙ্কেল।
সাজিদের কথায় আহসান আঙ্কেল বেশ অবাক হলেন। অবাক হলাম আমিও। চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে আহসান আঙ্কেল জানতে চাইলেন—কোনটা?
সাজিদ বলতে লাগল—একটু আগে যে বললেন, যতদিন ইসহাক আলাইহিস সালাম জন্মাননি, ততদিন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুত্র ছিলেন। ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সাথে সাথে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পুত্রের মর্যাদা হারান।
হ্যাঁ। তারা এরকমই বলে জবাব দিলেন আহসান আঙ্কেল।
কিন্তু বাইবেল কী বলে জানেন?
কী?
বাইবেল বলছে–And his sons Isaac and Ishmael buried him (Abraham) in the cave of Machpelah. [৩]
অর্থাৎ-ইবরাহীমের পুত্র ইসহাক এবং ইসমাঈল ইবরাহীমকে দাফন করল মাকপেলাহ নামক একটি গুহায়। দেখুন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পরেও বাইবেল বলছে—And his sons Isaac and Ismael. লক্ষ্যণীয়, বাইবেল কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পরেও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে তার পুত্র বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছে, আর খ্রিষ্টান মিশনারিরা কিনা ইসহাক আলাইহিস
সালামের জন্মের পরেই ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুত্রের খাতা থেকে বাতিল করে দিচ্ছে। এ যেন বাইবেলের ওপরেই একধরনের খবরদারি!
আসলেই তো! সাজিদের কথা শুনে মনে হচ্ছে খ্রিষ্টান মিশনারিগুলো তাদের বাইবেলটা ভালোমতো পড়েও দেখেনি। পড়লে তো এরকম আহাম্মকি যুক্তি দেখানোর কথা নয়।
আহসান আঙ্কেল বললেন—বেশ যৌক্তিক আলোচনা; কিন্তু মিশনারিরা বলে, এই ঘটনায় কুরআনও ইসমাঈল নয়, ইসহাকের দিকেই নাকি ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ কুরআনের ইঙ্গিত থেকেও নাকি জানা যায়, সেদিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈলকে নয়, পুত্র ইসহাককেই কুরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
আহসান আঙ্কেলের কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম। কুরআন এরকম একটি কথা কীভাবে বলতে পারে?
সাজিদ বলল—যেমন?
আহসান আঙ্কেল বলতে লাগলেন—সূরা সাফফাতের ৯৯ থেকে ১১২ নম্বর। আয়াতগুলো দেখো—
[৯৯] সে (ইবরাহীম) বলল, আমি আমার রবের পথেই চলব। তিনি নিশ্চয়ই আমাকে পথ দেখাবেন।
[১০০] হে আমার প্রতিপালক, আমাকে সৎকর্মশীল একটি পুত্র সন্তান দান করুন।
[১০১] এরপর, আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম।
[১০২] অতঃপর সে (পুত্র সন্তানটি) যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছাল, তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি, তোমায় আমি জবেহ করছি। এখন বলল, তোমার অভিমত কী? সে বলল—হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।
[১০৩] দুজনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল। আর ইবরাহীম তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিল।
[১০৪] আমি তাকে ডাক দিলাম হে ইবরাহীম!
[১০৫] তুমি তোমার ওয়াদা পূর্ণ করেছ। নিশ্চয়ই, আল্লাহ এভাবে সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করেন।
[১০৬] এটি ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
[১০৭] এবং আমি তাকে এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিলাম। [১০৮] এবং আমি তাকে পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। [১০৯] ইবরাহীমের ওপরে শান্তি বর্ষিত হোক।
[১১০] এভাবেই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করেন।
[১১১] সে (ইবরাহীম) ছিল সৎকর্মশীলদের একজন।
[১১২] আর তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, যে ছিল সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী। [৪]
এখান থেকে খ্রিষ্টান মিশনারিরা বলতে চায় যে, আয়াতের প্রথম দিকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু তার নাম উল্লেখ করা নেই। সূরাটিতে আরও কিছুদূর পরে এসে আবারও সুসংবাদ সংবলিত একটি পুত্রের কথা বলা হয় এবং নামও উল্লেখ করা হয়। এবার যার নাম উল্লেখ করা হয় তিনি হলেন ইসহাক আলাইহিস সালাম, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নয়। অর্থাৎ কুরআন থেকেই সুস্পষ্ট যে, সেদিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নয়, ইসহাক আলাইহিস সালামকেই কুরবানী করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।
সাজিদ একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, আঙ্কেল, মিশনারিদের এই যুক্তি খুবই দুর্বল।
কীভাবে? প্রশ্ন করলেন আহসান আঙ্কেল।
প্রথমে সূরা সাফফাতের একশতম আয়াতটি খেয়াল করুন। ওখানে কী বলা হচ্ছে? বলা হছে—হে আমার প্রতিপালক, আমাকে সৎকর্মশীল একজন পুত্র সন্তান দান করুন।
এখন আমাদের জানতে হবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই প্রার্থনা করে করেছিলেন। এই প্রার্থনা তিনি তখন করেছিলেন যখন তিনি সন্তানহীন ছিলেন। আগেই বলেছি, জীবনের দীর্ঘ চুরাশি বছর পর্যন্ত তিনি কোনো সন্তানের মুখ দেখেননি। ঠিক?
হ্যাঁ বললাম আমি।
এর পরের আয়াতে কী আছে দেখুন। পরের আয়াতে আছে এরপর আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিলাম।
খেয়াল করুন, সন্তানহীন অবস্থায় তিনি একজন সন্তানের জন্য প্রার্থনা করলেন। এরপর আল্লাহ তাকে পুত্র-সন্তান দান করলেন। সে কে তাহলে? ইহুদী, খ্রিষ্টান। ও ইসলাম এই তিন ধর্মের স্কলারগণ এই ব্যাপারে একমত যে প্রার্থনার পরে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে-সন্তান লাভ করেছিলেন তিনি-ই ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
তাহলে, ঘটনার পরম্পরা এবং ইতিহাস বলছে—প্রথম সন্তান ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। এইটুকু কি ক্লিয়ার?
আমরা উভয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। সাজিদ আবার বলতে লাগল,
এরপরের আয়াতে যান। বলা হচ্ছে-অতঃপর পুত্র-সন্তানটি যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছাল, তখন ইবরাহীম বলল, বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি তোমাকে জবেহ করছি। এখন বলল, এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।
আগের দুই আয়াত থেকে একটি ব্যাপার ক্লিয়ার যে, উক্ত সন্তান ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, ইসহাক আলাইহিস সালাম নন এবং যাকে কুরবানী করার স্বপ্ন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দেখলেন, সেও তাহলে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। আর তখন কিন্তু ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মও হয়নি। কথাগুলোকে যদি আমরা প্রশ্নোত্তর-আকারে সাজাই তাহলে কীরকম দাঁড়ায় দেখা যাক—
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য কখন প্রার্থনা করলেন?
যখন তিনি সন্তানহীন ছিলেন।
আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে যখন তাকে একজন পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দেন, সে কি প্রথম সন্তান না দ্বিতীয়?
প্রথম সন্তান।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রথম সন্তানের নাম কী?
ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
আয়াতে কোন সন্তানকে কুরবানী করার কথা বলা আছে?
দোয়া কবুলের পর সুসংবাদ-প্রাপ্ত সন্তানকে।
সেই সন্তান কে ছিলেন?
ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
সুতরাং, এখান থেকে এটি প্রমাণিত হলো যে, আয়াতে উল্লিখিত সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়।
এতটুকু বলে সাজিদ থামল। আমাদের দুজনের কেউ কোনো কথা বলছি না দেখে সে আবার বলতে শুরু করল—এবার তাহলে মিশনারিদের লজিকে আসা যাক। তারা। বলছে-কুরআন প্রথমে একজন পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছে; কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করেনি। কিছুদূর এসে কুরআন আবারও সুসংবাদসহ ইসহাক আলাইহিস সালামের নাম উল্লেখ করেছে। এখান থেকে তারা ধরে নিচ্ছে যে, কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া পুত্র ইসহাক ছিলেন, ইসমাঈল নয়; কিন্তু ইতিপূর্বে আমরা এই আয়াতগুলো থেকে এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছি যে, এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ইসহাক আলাইহিস সালামের নয়।
যদি তাদের দাবি মেনেও নিই, তাহলে ব্যাপারটি কেমন দাঁড়ায়? ধরে নিই যে এখানে ইসমাঈল নয়, ইসহাক আলাইহিস সালামের কথাই বলা হচ্ছে। তাহলে আয়াতের পরম্পরা অনুযায়ী দেখুন তো কেমন দেখায় ব্যাপারটি—
প্রথমে পুত্র ইসহাক আলাইহিস সালামের সুসংবাদ দেওয়া হলো। এরপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসহাক আলাইহিস সালামকে কুরবানী করার স্বপ্ন দেখলেন এবং ইসহাক আলাইহিস সালাম রাজি হলেন। ইসহাককে কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া হলো। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কুরবানী করতে উদ্যত হলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অনুগ্রহ করে তাকে বাঁচিয়ে দিলেন। এরপর? এরপর আরও নিচে এসে আবারও ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হলো।
ব্যাপারটা কেমন বেখাপ্পা দেখাচ্ছে দেখুন। একবার ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ। এরপরে তার বেড়ে ওঠার কাহিনি। তারপরে তাকে কুরবানী করার ও তাকে বাঁচিয়ে নেওয়ার কাহিনি। শেষে এসে আবার তার জন্মের কাহিনি। কেমন নাব্যাপারটা?
আমি বললাম, হ্যাঁ, পুরোই বিদঘুটে ব্যাপার।
ইসহাক আলাইহিস সালামকে এখানে বসাতে হলে কুরআন নিজেই তার বাচনভঙ্গি থেকে সরে যাচ্ছে কিন্তু কুরআন এখানে ইসহাক আলাইহিস সালামকে নয়, ইসমাঈল আলাইহিস সালামকেই বুঝিয়েছে। তাছাড়া, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছার কাছে নিজের জীবন এভাবে উৎসর্গ করে দিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য শক্তির পরিচয় দিতে হবে। কুরআনের অনেক জায়গায় ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে ধৈর্যশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫] অন্যদিকে, কুরআনে ইসহাক আলাইহিস সালামকে উল্লেখ করা হয়েছে জ্ঞানবান হিশেবে।[৬]
এখান থেকেও উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে, সেদিনের ঘটনায় ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়।
এছাড়াও, বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ তার বিখ্যাত বই আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইবনু আব্বাস রাহিমাহুল্লাহর উদ্ধৃতি টেনে লিখেছেন, সেদিন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে-পশু দিয়ে কুরবানী করেছিলেন তার শিং কাবা শরীফের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষিত ছিল।[৭]
এখান থেকেও বোঝা যায় যে, উক্ত ঘটনায় সেদিন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-ই ছিলেন, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়। কারণ, এই বিষয়ে সকল ইতিহাসবিদ একমত যে, কেবল ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-ই মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। ইসহাক আলাইহিস সালাম কখনোই মক্কায় আসেননি। তিনি ছিলেন মিশরে। সুতরাং, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মেরও হাজার বছর আগে থেকে আরবরা জানত, এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজপুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী দিতে এনেছিলেন। তাই ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সেই স্মৃতি রক্ষার্থে তারা যুগ যুগ ধরে সেটা সংরক্ষণ করে রেখেছিল। যদি ইসমাঈলের জায়গায় ইসহাক আলাইহিস সালাম হতেন, তাহলে পশুর এই শিং প্রাচীন মক্কার আরবদের পাওয়ার কথাই না। এখান থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, সেদিন ঘটনাস্থলে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়।
আহসান আঙ্কেল আরও কিছু-একটা বলতে যাচ্ছিলেন। তিনি কিছু বলার আগেই সাজিদ বলে উঠল—আঙ্কেল, Encyclopedia Judaica-তে কী বলা আছে আপনি জানেন?
আহসান আঙ্কেল বললেন, কী বলা আছে?
বলা আছে–It is related that a renowned traditionalist of Jewish origin, from the Qurayza tribe, and another Jewish scholar, who converted to Islam, told that Caliph Omar Ibn Abd al- c Aziz (717-20) that the Jews were well informed that Ismail was the one who was bound, but that they concealed this out of jealousy.[৮]
অর্থাৎ ইহুদীরাও খুব ভালোভাবে জানত যে, সেদিনকার ঘটনায় ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-ই ছিলেন, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়; কিন্তু ঈর্ষান্বিত ইহুদীরা এটা খুব সুকৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
আমি বললাম, এটা স্বীকার করে নিলে তাদের ক্ষতি কী?
সাজিদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরাও খুব ভালোভাবে জানত যে, শেষ যামানায় একজন ঈশ্বরের দূত আসবে। তারা আশা করে রেখেছিল, সেই দূত হবে ইসহাক আলাইহিস সালামের বংশধরদের মধ্য থেকে। কারণ, ইসহাক আলাইহিস সালাম ছিলেন সারা আলাইহাস সালামের গর্ভের, যিনি একজন স্বাধীন নারী ছিলেন। পক্ষান্তরে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জন্মেছেন হাজেরা আলাইহাস সালামের গর্ভে, যিনি ছিলেন একজন দাসী। অর্থাৎ একজন দাসীর পেটে জন্ম নেওয়া সন্তানের বংশে ঈশ্বর এরকম একজন সম্মানিত দূত পাঠাবে, এটি অহংকারী ইহুদী-খ্রিষ্টানরা মেনে নিতে পারেনি, তাই।
এতটুকু বলে সাজিদ তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আঙ্কেল, আমার আরেকটি ক্লাস আছে। আজকে উঠতে হবে যে।
টেবিলে রাখা বইগুলো সাজিদ হাতে তুলে নিচ্ছে। দেখলাম বইগুলোর মধ্যে মাওলানা আকরাম খাঁ রচিত মোস্তফা চরিত বইটিও রয়েছে। আমি টান দিয়ে সেটা ওর হাত থেকে নিয়ে নিলাম। এত ভালো মানের সীরাত এভাবে হাতছাড়া করা যায় না।
সাজিদ আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বলল, আঙ্কেল, আজ তাহলে আসি?
আহসান আঙ্কেল আরেকবার হাত বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে। হ্যান্ডশেক করা হলে আহসান আঙ্কেল সাজিদের চোখে চোখ রেখে বললেন, Live long my son।
সাজিদ মুচকি হাসল। তার ক্লাসের তাড়া আছে। সালাম দিয়ে সে ক্লাসের উদ্দেশ্যে ছুটল। সাজিদ চলে যাবার পরে আমি আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে, এই লোকটার বয়স হওয়া উচিত ছিল ৩০ বছর; কিন্তু লোকটা ইতোমধ্যেই ৫০ এর কোঠা পার করে ফেলেছে। তার চেহারা থেকে বিরক্তির আভাটুকু চলে গেছে। বিরক্তির বদলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে এক চিলতে হাসি।
————-
১ জেনেসিস, ২২: ২
২ জেনেসিস : ১৬:৩
৩ জেনেসিস: ২৫:৯
৪ সূরা সাফফাত, ৩৭ : ৯৯-১১২
৫ সূরা আম্বিয়া, ২১ : ৮৫
৬ সূরা যারিআত, ৫১ : ২৮
৭ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড : ০১; পৃষ্ঠা : ১৫৭
৮ Encyclopedia Judaica, Volume : 09
No comments