Header Ads

আর নয় ৯ দফা, এখন সরকার পতনের ‘এক দফা’: সমাবেশে ঘোষণা

 “যদি কোনোভাবে কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।”


সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে সংগঠনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “আমাদের নয় দফা এখন ‘এক দফায়’ পরিণত হয়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আগামীকাল আমরা অসহযোগ আন্দোলন করব। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।”

জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ‘খুনি সরকারকে’ কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়,আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।”

কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেড়শ মানুষের প্রাণহানি, সংঘর্ষ থামার পর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে এবার চূড়ান্ত এই দাবি প্রকাশ করা হল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশাল এই সমাবেশে।

বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনের ডাকা একা কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও অভিভাবকরাও যোগ দেন।



বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশ চলে সোয়া ৬ টা পর্যন্ত। এরপর শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহ্বান থাকবে জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকারি যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম আপনারা মানবেন না।”

যেভাবে ঘোলাটে হয় পরিস্থিতি

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি হাই কোর্ট বাতিল করার প্রতিক্রিয়ায়।

৫ জুলাই মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের টানা কর্মসূচির মধ্যে সরকারও হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে, ফলে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।

পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমে মিছিল বের হয় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’। কিছুক্ষণ পর এই স্লোগান চলার পর অবশ্য স্লোগান পাল্টে বলা হয়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।’

তবে পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।”

সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।


এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

সেদিন সংঘর্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও এক হকার এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।

তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের চার তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০ জনে, কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়।

পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। হত্যার তদন্ত, বিচার দাবি, গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, শিক্ষার্থীদের মুক্তি-ইত্যাদি দাবি জানানো হতে থাকে।


সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তের ঘোষণা এসেছে, তিন সদস্যের বিচারিক কমিশন গঠন হয়েছে, তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সমাবেশের দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথাও বলেছেন তিনি।

তবে ফেইসবুক বার্তায় সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে।”

মিছিলের নগরী ঢাকা

শুক্রবার দেশজুড়ে গণমিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শনিবার শহীদ মিনারে এই সমাবেশের পাশাপাশি রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমায়েত হয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অন্যরা।


বিকাল তিনটার আগে সব মিছিলের গন্তব্য ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই মিছিলেই সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান উঠতে থাকে।

স্লোগানগুলো ছিল ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।

সব মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে এক হওয়ার পর তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

জমায়েত একদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়িয়ে পুরান ঢাকার চানখারপুল পর্যন্ত। পূর্বদিকে দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে ও উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার পার করে মানুষের অবস্থান।

সরকারের বিচারের ঘোষণা, আসছে ‘সম্মিলিত মোর্চা’

শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রিপরিষদও পদত্যাগ করতে হবে বলেও দাবি করেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, “এই ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে।

“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই যেখানে আর কখনও কোনো ধরনের ফ্যাসিজম, স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।”

শেখ হাসিনা এবং এ সরকারের ‘লুটপাট, দুর্নীতি এবং গণহত্যার’ বিচার করা হবে ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আগের সকল হত্যা গুম নিপীড়নেরও বিচার করা হবে। সকল রাজবন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে ‘জেল মুক্তি’ করে আমাদের ভাইদের নিয়ে আসব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য নাগরিক ছাত্রসংগঠন এবং পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মিলে ‘সম্মিলিত মোর্চার’ ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা আমরা খুব শিগগিরই হাজির করব।”

No comments

Powered by Blogger.